ছেলেবেলায় স্কুলের বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের সর্বকালীন
পঠিত একার্থক শব্দ “শ্রমিক= যারা শ্রম করে”।কিন্তু . . . তার অর্থ!
আচ্ছা! ‘শ্রমিক’ . . কাকে বলে? ওই যে মিস্ত্রী, মুটে-মজুর, বাড়ির কাজের মাসি, কর্পরেশনের
নর্দমা পরিষ্কারের লোক, এদেরই তো বলে . . . ‘শ্রমিক’।
প্রকৃত উত্তরটা সত্যিই কি এতটা রুক্ষ-নির্মম, . . . এতটাই অমানবিক!??
না। এই গোটা বিশ্বসভ্যতার প্রতিটি ইট, বালি, পাথরে বিন্দু বিন্দু ঘাম জড়িয়ে রয়েছে যাদের; যারা মানবসৃষ্ট ‘চতুর্বর্ণ’এর এক্কেবারে নিম্নে
অবস্থান করছে; হয়ত কখনোই যারা এই সমাজের আশির্বাদধন্য শ্রেণীর চৌহদ্যিতেও জায়গা
পাবে না- তারাই আমাদের এই রুঢ় গণতান্ত্রিক সমাজের ‘শূদ্র’ তথা ‘শ্রমিক’ জাতি; যদিও
মানবসভ্যতার সবথেকে উপেক্ষিত এই সর্বশেষ ‘বর্ণ’ই স্থান পেল বিশ্ব ইতিহাসে। লেলিহান
শিখার মত জ্বলে উঠলো বইয়ের পাতায়।
বর্তমান সময় থেকে একটু পিছিয়ে গেলাম অকথিত-অবর্ণিত অতীতের পথে . . .
সাল ১৮৭৫। এই অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি থেকে ইউরোপে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে শ্রমিকদের উপর চলতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অকথ্য পরিশ্রম আর বিনিময়স্বরুপ নূন্যতম মজুরীর অনিশ্চিয়তা। দীর্ঘদিনের এই অত্যাচারের পারদ বাড়তে বাড়তে ছাড়িয়ে গেল বিপদসীমা; সময় তখন ১৮৭৬। গর্জে উঠল 'শ্রমিক' সমাজ। অনধিক ১০ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারনের দাবিতে শুরু হল আন্দোলন, রাস্তায় নামল মিছিল; কেন্দ্রবিন্দু শিকাগো'র হে মার্কেট। সরব হল পেনিসিলভিয়া-শিকাগোসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু শেষবর্ণের স্ব'অধিকারের বিরুদ্ধে ওঠা এই ধ্বনিত কন্ঠ নীরব হয়ে গেল ব্রিটিশ সেনার গুলিতে; সারিয়ে গেল বহু প্রাণ, আঘাত পেল অসংখ্য দেহ, আর ছারখার হল অগণিত মন। আরও তীব্রতার সাথে এগিয়ে চলল মিছিল; সঙ্গে আত্মবলের 'লাল'ধ্বজার ন্যায় মৃত শ্রমিকদের রক্তাক্ত শার্ট।
“বেরিয়েছি যখন পথে, পথই এখন ঘর,
আঁধার ভেঙে এগিয়ে যেতে আর পাইনে ডর।
থেমে যাওয়ার নাম মৃত্যু অজানা কারো নয়,
না থেমে তাই এগিয়ে চলি ভয়’কে করে জয়”।।
১লা মে থেকে ৫ই মে টানা ৪দিনে গড়াল মিছিলের চাকা। নিহতের সংখ্যা বেড়ে আরও ৪। গ্রেফতার হল শত সহস্র শ্রমিক; আর তাদের পরিণাম! মৃত্যুদণ্ড।
“অসদো মা সদ্গময়ঃ । তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ ।
ওম মৃত্যর্মা অমৃতমঃ গময়ঃ । শান্তি শান্তি ওম
শান্তি ওম, শান্তি ওম, শান্তি
ওম, হরি ওম… তদসদ”।।
হাজারো প্রাণের এই নির্মম বলিদান মর্যাদা পেল ১৮৮৮ সালে।
আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সেন্ট লুইস শ্রমিক সম্মেলনে কাজের
সময় ৮ ঘণ্টা নির্ধারণের দাবিতে ‘মে দিবস’ পালনের ঘোষণা করা হল। পরের বছর, ১৮৮৯’তে কমিউনিস্ট ও সমাজতন্ত্রীদের
প্যারিস সম্মেলনে ১লা মে তারিখটিতে বিশ্বব্যাপী ‘শ্রমিক-শ্রেণির আন্তর্জাতিক দিবস’
হিসেবে পালনের শিলমোহর পড়লো।
আন্তর্জাতিক ‘ছুটি’ দিবসের মান্যতা পেয়ে ক্যালেন্ডারে রাঙায়িত ‘১লা মে’। কিন্তু এই দিনটির নৈপথ্যে যাদের আত্মদান ও
সংগ্রাম মিলেমিশে রয়েছে; তাদের জন্য কিন্তু বার্ষিক ক্যালেন্ডারে শুধু এই একটা
দিনই বরাদ্দ। অনেকটা ২৩শে জানুয়ারি, ১৫ই আগস্ট বা ‘মাতৃদিবস’এর মত। সবরকম ভক্তি-ভালবাসা-উৎযাপনের আয়ু ওই একদিনেই।
“শ্লোগান শুনি, বক্তৃতা হয়-
শ্রমিক দিবস আসে।
দিন চলে যায়, কেউ থাকে না,
No comments:
Post a Comment