‘ধরন’, ‘চলন’ বা ‘ফ্যাশন’- এমন একটি বিষয় যাকে কোন ভৌগোলিক সীমারেখায় বা সময়ের খাঁচায় বন্দী করা যায় না। উনবিংশ শতাব্দীর স্বর্ণযুগীয় সিনেম্যাটিক ‘ফ্যাশন’ থেকে শুরু করে আজ একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটলাইজড ওয়েস্টার্ন ‘ফ্যাশন’; এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে অনেক কিছুর পাশাপাশি ‘ফ্যাশন’ জগতেও পরিবর্তন এসেছে আমূল। সেও পাল্টেছে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে; নিজেকে করে তুলেছে এখনকার ভাষায় ‘আপগ্রেডেড’। আমাদের মানসিকতার সাথে ‘ফ্যাশনেও লেগেছে পাশ্চাত্যের হাওয়া। বছর-যুগ-শতাব্দী ধরে চলে আসা নবীন প্রবীণের দলাদলির মাঝেও ‘ফ্যাশন’-এর চাকা এগিয়ে চলেছে অবিরত, সঙ্গে নিয়ে অভিনবত্বের হাল্কা-মিষ্টি ছোঁয়া।
“অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত,
সবেতেই বিরাজমান।
সময়ের সাথে রদবদল হলেও-
‘ফ্যাশন’, তুমিই মহারাজ”।।
তিন অক্ষরের এই ইংরেজি শব্দটিকে বাংলায় অনুবাদ করলে, অগুনিত অর্থ গরগড়িয়ে সামনে এসে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পরবে। ঠিক তেমনই এই শব্দের প্রকৃতিও একেবারে একরকম . . . অগুনিত। গতিময়তার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে নিজেকে পরিবর্তনযোগ্য করে চলেছে প্রতিনিয়ত।
বাঙ্গালিয়ানা থেকে বিদেশিয়ানা; সবেতেই ‘ফ্যাশন’ অতুলনীয়। একটা সময় এসেছিল যখন সর্বধর্ম নির্বিশেষে ‘ট্রেডিশনাল’ পোশাকের ব্যবহারে অনিহা দেখা দিয়েছিল; কিন্তু এই ‘ফ্যাশন’এর হাত ধরেই তারা আবার স্বসন্মানে নতুনভাবে ফিরে এল আমাদের কাছে। উদাহরণস্বরূপ, এই যেমন বাঙালির চিরাচরিত ‘ড্রেস কোড’; শাড়ি আর ধূতি-পাজামা’কেই ধরে নি। তাকেও কিন্তু নিজের যাদুতে সম্পুর্ণভাবে মেকওভার করে নতুন মোড়কে সে মেলে ধরলো বর্তমান যুবসমাজের কাছে। অন্যদিকে, হালের ওয়েস্টার্ন পোশাকেও ‘ফ্যাশন’এর বিবর্তনের ধারা ক্রমাগত পরিবর্তনশীল।
‘ভালবাসা’ কিংবা ‘ভাললাগা’র পরিধিটা যতই বড় হোক না কেন, সর্বপ্রথম স্থানটা বরাদ্দ থাকে আমাদের নিজেদের জন্যই। কারণ, আমরা নিজেকেই তো প্যাম্পার করি সবথেকে বেশি।
“আমি'ই আমাকে লালন করি-
আমার অপরিমেয় ভালবাসায়।
আবার আমিই আমাকে পালন করি-
অপরিসীম ভালোলাগায়”।।
প্রতিনিয়ত নিজের সাথে কিংবা বলতে পারি নিজের ওপরেই আমরা নানারকমভাবে এক্সপেরিমেন্ট করেই চলেছি ক্রমাগত। আদব-কায়দা, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে জামা-কাপড়, সাজ-সজ্জা, এমনকি জুয়েলারিতেও আমরা ফ্যাশনেবল হয়ে উঠছি দিনদিন। উপলক্ষ্য, অনুষ্ঠান ছাড়াও সবসময়ই নিজেকে আপগ্রেডেড করে চলেছি সর্বক্ষন। কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবাই তাদের পছন্দমতন রাঙিয়ে তুলেছে নিজেদের। অদলবদল ঘটেছে তাদের মানসিকতায়ও, সমাজের দৃষ্টিও পালটেছে অনেকটা। সবাই আমরা এগিয়ে চলেছি যুগের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে। আপন করে নিয়েছি আবহহাওয়ার এই ‘ফ্যাশনেবল’ পরিবর্তনকে।
“পুরাতন’কে সাথে নিয়ে,
বরণ করে নবীন’কে-
নতুন পথে পা বারিয়ে
চিনতে শিখলাম জগতটাকে”।।
শত-সহস্র ভিড়ের মাঝে নিজেকে একটু অন্যভাবে দেখতে কার না ভালো লাগে। আর তাই, সময়ের সাথে নিজেকে একটু একটু করে বদলে ফেলা; আর এই বদলের হৈ-হট্টগোলে আজ যা ‘ফ্যাশনে ইন’, কাল সেটাই আবার ‘ফ্যাশনে আউট’। লড়াই এড়াতে প্রবীণ পিছিয়ে যায়, জায়গা করে দেয় নবীনকে। ‘ওল্ড ইস গোল্ড’ প্রবাদ বাক্যটির হাত ধরে হালকা ছিটেফোঁটা নতুন মিশিয়ে সেই ‘ব্যাক ডেটেড’ প্রবীণরাই আবার ফিরে আসে নতুন মোড়কে। ফ্যাশনের মায়াজালে বাচ্ছা থেকে বুড়ো বলতে গেলে এখন সবাই কুপোকাত। আসলে, ‘ফ্যাশন’ যে ‘চিরযৌবনা’, যার নেই কোন বয়সসীমা।
তবে এই ফ্যাশন দুনিয়ায় বেশ কিছু বছর হল দুই নতুন সদস্য যোগদান করেছে; ‘ট্যাটু’ আর ‘পিয়ারসিং’। এই মুহুর্ত্যে এই বিশেষ্যপদ দুটি মার্কেটে খুবই জনপ্রিয়। যদিও ভালো করে দেখলে এই দুই শব্দেরও তেমন কোন ‘এজ লিমিটেশন’ নেই। যুবক-যুবতী থেকে বয়স্ক সবাই এখন এতে মগ্ন। সত্যিই . . . তিন অক্ষরের এই ইংরেজি শব্দটির এলেম আছে বলতে হবে! দেশীয় চাল-চলনের সাথে ওয়েস্টার্ন কালচারকে ফেবিকল দিয়ে এমন জুড়েছে, যে সে বন্ধন খোলার জো এই দুনিয়ায় কারোর নেই।
শব্দের অভিধানে ‘ফ্যাশন’ শব্দের হরেকরকম অর্থ থাকলেও; তার প্রকৃত অর্থ হল মানুষের দৃশ্যমান সৃজনশীলতা, যা তাঁর শারীরিক সৌন্দর্য এবং তার ব্যক্তিত্বকে উন্নত করে। তাই এটা বলাই বাহুল্য, ‘ফ্যাশন’ প্রতিটি মানুষের জীবনে ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। প্রয়োজন শুধু সঠিকজায়গায় তার সুব্যবহার।
এই বিষয়ে Italian Fashion Designer, Giorgio Armani’র একটা quotation মনে পড়ে গেল-
“Elegance is not standing out, but being remembered.”
No comments:
Post a Comment